প্রবাসী মো: শাহআলম মারা যান ৭ই এপ্রিল রাতে। তার করোনা পজিটিভ ছিল। এই অবস্থায় গোয়ার্তুমি করে বাবার বাড়ি, শশুর বাড়ি এমনকি আত্নিয়ের বাড়িতেও ঘুরে বেড়িয়েছেন। শোনেননি কারো কথাই। এখন মারা যাওয়ার পর হিসেব মেলাতে হচ্ছে তিনি কতজনকে সংক্রমিত করে গেছেন আর কতজনের বিপদ ঘটিয়েছেন। এই হিসেব মেলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগকে। স্ত্রী, সন্তান এবং তার ভাইয়ের করোনা আক্রান্তের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে এরই মধ্যে। নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার অভিজিৎত রায় জানিয়েছেন, শাহআলমের পরিবারের ১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করেন তারা প্রথমে। শুক্রবার তার শ্বশুর বাড়ির আরো ৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শাহআলম কতোজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন তা নিরুপন করছেন তারা।৭ই এপ্রিল মারা যান শাহআলম। এরপর তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়।
প্রবাস থেকে দেশে ফিরে কোয়ারেন্টিন মানেননি শাহআলম। নিজের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়িতে ঘুরে বেড়িয়েছেন অবাধে। গিয়েছেন অন্য উপজেলায় আত্বীয়ের বাড়িতেও। তবে পরিনতি ভালো হয়নি তার। শ্বাসকষ্ট নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে মারা যান ৩৫ বছর বয়সী এই প্রবাসী। মো: শাহআলম ১৮ই মার্চ দেশে আসেন। কথিত আছে বিমানবন্দর থেকে তাকে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হলে সেখানে দায়িত্বরতদের ৫০ হাজার টাকা দিয়ে চলে আসেন বাড়িতে। বাড়িতে এসেও ছিলেননা কোয়ারেন্টিনে। তার মৃত্যুর পর প্রকাশ পায় এসব তথ্য। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ দাবী করে শাহআলম ১৮ই মার্চ সর্বশেষ মালয়েশিয়া হয়ে শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। শোনা যায় ২০শে মার্চ থেকে ১লা এপ্রিল পর্যন্ত নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। তারপর থেকে ঘোরাঘুরি শুরু।
নাসিরনগরের পূর্বভাগ ইউনিয়নের মগবুলপুর গ্রামের আবদুল গফুরের ছেলে শাহআলম। তার মৃত্যুর পর ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান- শাহআলম আসার পর থেকে শ্বশুর বাড়িতেই ছিলো। মাঝেমধ্যে বাবার বাড়িতে আসা যাওয়া করেছেন কিনা জানিনা। আমাদের কাছে তালিকা আসার পর আমরা অনুসন্ধান করে তাকে বাড়িতে পাইনি। আমার ইউনিয়নে ১৯ জন লোক প্রবাস থেকে আসে বাস্তবে। যদিও ২৩জনের তালিকা দেয়া হয় আমাদের কাছে। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে থাকে ২জন, ১জনের নাম ঠিকানা ভুল ছিলো। শাহআলম ছাড়া প্রবাস থেকে আসা সবাই আমাদের পর্যবেক্ষনে ছিলো। প্রত্যেকের বাড়িতে গ্রামপুলিশ পাঠিয়ে কমিউনিকেশন ঠিক রাখতে পেরেছি। কিন্তু শাহআলমকেই শুধু আমরা বাড়িতে পাইনি। তার বাবাকে জিজ্ঞেস করার পর বলেছে শশুর বাড়িতে রয়েছেন। এরপরও আমরা ইউপি সদস্যের মাধ্যমে তার বাবাকে ইনফর্ম করেছি তার ছেলে যদি বাড়িতে আসে সে যেন ১৪ দিনের আগে বাড়ি থেকে বের না হয়। বাড়িতে আসার পরই যেন আমাদের খবর দেয়। আমাদের অনুসন্ধানের ২/১ দিন আগেই সে নিজের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে চলে যায়। সেখানেই সে মারা গেছে। শুনেছি ওই এলাকার লোকজনও তাকে ব্যারিকেড দিয়েছিলো। এরপর তার শ্বশুর বলেছিলো, ‘আমার জামাই আমার বাড়িতে থাকবো, কোন বেডা কি করবো’। শ্বশুর বাড়িতে এই হেল্প পেয়ে সে আর বাবার বাড়িতে আসেনি। পার্শ্ববর্তী গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রামে তার শ্বশুর বাড়ি। নাসিরনগরে নিজের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ির বাইরে সে সরাইলের শাহজাদাপুরে তার এক আত্বিয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন বলেও তথ্য পাওয়া যায়। শাহআলমের মৃত্যুর পর শ্বশুর ও তার নিজের বাড়ি লকডাউন করে দেয় প্রশাসন। ৪ঠা এপ্রিল অসুস্থতা বোধ করলে শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর টাইফয়েড ধরা পরে শাহআলমের। কিন্তু তখন করোনা ভাইরাসের কোন উপসর্গ প্রকাশ পায়নি। ৭ই এপ্রিল রাতে শ্বাসকষ্ট বাড়লে স্বজনরা তাকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারে ৯ ভাই বোনের মধ্যে শাহআলম ছিলেন সবার বড়। প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে জেঠাগ্রামের নোয়াহাটি এলাকার মন্নান মিয়ার মেয়ে শাহনাজ পারভিনকে (২০) বিয়ে করেন তিনি। তার রয়েছে রেখা নামের আড়াই বছর বয়সের এক কন্যা শিশু।
মূল লেখা: জাবেদ রহিম বিজন
428 total views, 1 views today
Be the first to comment on "কোয়ারেন্টিন না মেনে এলাকায় করোনা ছড়িয়ে মারা গেলেন প্রবাসী মো: শাহআলম"